মাঝখানের ছেলেটাই সবচেয়ে আগে চোখ কেড়ে নিচ্ছে, তাই তো? আমারও। কীরকম মস্তিতে আছে ও। ফচকে কোথাকার। কাকে কী বলছি জানিনা। ছেলেটা এখন হয়ত আমার বাবার বয়সী। সামনের দু’টো দাঁত বেরিয়ে আছে। চোখেমুখে দুষ্টুমি। কানগুলো কেমন কুলোর মত। ডান কানটা কি বেশি বড়? টানা আর মোলা খেয়ে অমন হয়ে গেছে। বুদ্ধিও আছে। ঝকঝকে একটা দীপ্তি। তার বাঁপাশের জনকে, ছবিতে যে ডানদিকে, তার হাতে একটা বেলনাচাকি ধরিয়ে দিলে ও পৃথিবী ক্ষত্রিয়শূন্য করে ফেলবে। আমারই বুক দুরুদুরু করছে। হাতদু’টো পিছনে লোকানো। ওতে একটা ডান্ডা জাতীয় কিছু আছে, আমি নিশ্চিৎ। এত রাগ কেন ওর?
ছবিতে একদম বাঁ দিকের বাচ্চাটা। খুব ক্লান্তি ওর। জীবনের অর্থ ও বুঝতে শুরু করেছে কি? নিদ্রাহীনতা গ্রাস করেছে, পৃথিবীর অবস্থা দেখে? লাট্টু হারিয়ে গেছে? মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না? অফিস প্রভিডেন্ট ফান্ড আটকে দিয়েছে? জ্বর হয়েছে? কাঁচা ময়দা খেয়ে পেট ছেড়েছে? কী হয়েছে তোমার?
আর ওই মেয়েটা? ক্যামেরা নিশ্চয়ই রোজ আসে না বাড়িতে? তার চেয়েও আশ্চর্য কিছুর সন্ধান পেয়েছে ও? আমার এখন মনে হচ্ছে ফচকে পরশুরামের জামার ভিতর একটু আগেই পিঁপড়ে ছেড়ে দিয়েছিল। ওকে উঠোনে কুড়িয়ে পাওয়া চ্যালাকাঠ দিয়ে ক্যালানোর আগেই ক্যামেরা এসে গ্যাছে এবং সবাইকে জড়ো করা হয়েছে। নেমেসিসের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে হচ্ছে। মেয়েটা কিন্তু খুব আগ্রহভরে অন্যদিকে তাকিয়ে নেই। তখনই একটা কাঁসার থালা উল্টেছে কোথাও, পলকের জন্য অন্যমনস্ক হয়েছে কি হয়নি…
ক্লান্তর থিসিস সাবমিশনের ডেডলাইন ছিল আজ দুপুরে। ও সবে অ্যাবস্ট্রাক্ট লেখা শেষ করেছে রাত জেগে। ডানদিকের সুপুরুষ জোয়ানটির দেরি হয়ে যাচ্ছে। মানে ঠিক দেরি না, কিন্তু ওকে বেরোতে হবে। ছবিওলা ঘাড় নাড়লেই সে বেরিয়ে যাবে। সম্ভবত কলেজে। গত পুজোয় একটা ম্যাগাজিন এসেছিল বাড়িতে। ওতে সুচিত্রার একটা ছবি ছিল। ওমনি করে দাঁড়িয়ে। একটা কনুই ভাঁজ করে থুতনির কাছে হাত। অন্যটা পেটের উপর আড়াআড়ি, উপরোক্ত কনুই ছুঁয়ে। বড়সাহেব উকিল। বাকিরা? বাবা জ্যেঠু? মা? ফচকের কথা বলছি। নাকি ফচকের পিছনেই ফচকের বাবা?
ফচকে কিছু একটা বলতে চাইছে আমাকে। সবার পিছনে ঠাকুরদাদার কানও কুলোর মত। কী বলছিস রে ফচকে?