– এ কী? এ’সব কী?
– ফুল?
– ফুল? আমার জন্য?
– হ্যাঁ। খালি হাতে আসা খারাপ দেখায়।
– খালি হাতে আসা খারাপ দেখায়? আর মাঝরাতে এ’রকম না বলে কয়ে মেয়েদের ঘরে ঢুকে আসা খারাপ দেখায় না?
– আমি লুকিয়ে ঢুকিনি তো! দরজা দিয়েই তো এলাম।
– আর বাবা আসতে দিলো?
– মানা তো করলেন না।
– বাবা দেখেছে আদৌ তোকে?
– দেখেন নি? অবিশ্যি টিভি দেখছিলেন।
– নির্ঘাৎ দেখে নি। যদি দেখত…
– কী হত?
– ভিরমি খেত।
অলকা খাট থেকে উঠে দাঁড়াল। জানালার পাশে টেবিলের উপর পেতলের ফুলদানি থেকে পুরোনো ফুলের ঝাড়টা তুলে রাখল। তারপর বোতল থেকে জল ঢালল একটু। তারপর ফুলগুলো বসিয়ে দিল তাতে। বাগানবিলাস। লাল, সাদা। এক দু’টো বেগুনী। বাসি। ম্লান। শুকনো। চেনা।
– কোথায় পেলি ফুলগুলো?
– মনে নেই। কিচ্ছু মনে নেই। হঠাৎ দেখলাম তোর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। হাতে ফুল। তার আগের কথা কিছু মনেই নেই। ভাবলাম, তোর বাড়ি আসব বলেই বেরিয়েছিলাম হয়ত। তোর জন্যই ফুল এনেছি।
অলকা উত্তর দিলো না। তাকিয়ে রইল নিশার এর দিকে। নিশার মুখ নীচু করল।
– পছন্দ হয়নি না? পুরোনো ফুল, না? ছিঃ, আমি কি আর কিছু পেলাম না?
অলকা খাটে উঠল। বিছানায় হাত পেতে ইশারা করল। নিশার সঙ্কোচভরে উঠে বসল।
– আমার জন্য কিছু না আনলে তোর খারাপ লাগে? এমনি আসতে পারিস না?
নিশার মুখ তুলল না। অলকা হাসল।
উঠোন জুড়ে ভেজা শাড়ির গয়নাগাঁটি,
চিঠির বাক্স কল্পতরু, যখন যা চাস,
দুপুর রোদে কাগজ কলম খেলনা বাটি,
হোক না মলিন, এই তো আমার বাগানবিলাস…
“আনতে ইচ্ছে করে”, নিশার বলল। “আর তো কিছু পারি না। ফুল। কিন্তু আজ যে কেন বাসি ফুল আনলাম জানি না। কিছু মনে পড়ে না।”
অলকা জানে। এই এক গোছা বোগেনভিলিয়া সে নিশারের কবরের উপর রেখে এসেছিল সকালে। ফুলগুলো টাটকা ছিলো তখন। মাটি থেকে বেরিয়ে থাকা মার্বেলের ফলকটার মতন। তার উপর কালো অক্ষরে খোদাই করা নিশার ওয়াসেখ এর নাম এর মতন।
“বেশ তো। কাল আনিস, টাটকা ফুল?”
অলকা কাল সন্ধ্যেবেলায় ফুল রেখে আসবে’খন, তাজা থাকবে তাহলে রাত অবধি।