সব শহর এ প্রবেশ করা হয়না। তারা অচেনা, অধরা হয়ে থেকে যায়। রাজ্যজোড়া রাজপথের উপর টাঙানো বিশাল সবুজ নিশানের নাম হয়ে থেকে যায়। “তুমি যেদিকে যাচ্ছ, যাও, কিন্তু ডাইনে যে পথ গেছে বেঁকে, সে পথ নিলে লুইভিল।” কখনও যাওয়া হয়না। ঢুঁ মারা হয় না। সোজা এগিয়ে যেতে হয়। গন্তব্য ঠিক করাই আছে।

আবার কিছু শহর হয় শহরের মতন। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের বাইরে বাস অটো ট্যাক্সি চাপলেই এ রাস্তা সে রাস্তা স্টেশন রোড হয়ে সেতু পেরিয়ে কোনও ভনিতা না করে সোজা শহরের বুকে। কিন্তু শহর কোনটা? সেই শহর বললে কোন দিকে আঙুল দেখাবে বলো তো? ওইটা হল বড়বাজার। এইটা ব্রুকলিন। এই হল স্যার চাঁদনি চক, এবার কোথায়? না না না, এইগুলো শহর নয় তো। অংশ। পুঁতি জুড়ে জুড়ে মালা। মালা কই?

আজ অবধি দু’টো শহর পেয়েছি ও’রকম। আরও বড় শহরগুলোয় জলপথে গেলে হয়ত এই সংখ্যাটা বাড়ত, কিন্তু আমার জাহাজ বাড়ন্ত। শহরে ঢুকলে শহর হারিয়ে যায়। পাড়া হয়ে যায়। এই শহরদু’টোকে দেখেছি চোখে একরাশ মায়া নিয়ে। বিস্ময় নিয়ে। রাজপথে চলতে চলতে হঠাৎ একটা মোড় ঘুরে সামনে হাজির হয়েছে তারা। দুই পাশ জুড়ে। তর্জনী তাক করে বলা গেছে, ওই যে, ওইটা হল অ্যাটলান্টা। শেষ বিকেলের আলো অতিকায় বাড়িগুলোতে ঠিকরে পড়ছে। আর একটু রাত করে এলে আলো জ্বলবে। শহুরে আলো। লাল। সাদা। ঝলমলে।

কিন্তু শহরে ঢুকলে আবার সেই একই সমস্যা। বাইরে থেকে দেখা শহরটা হারিয়ে যায়। ওই অট্টালিকে অবধি পৌঁছনো যায় ঠিক ই, কিন্তু অত কাছ থেকে আলাদা লাগে। অন্যরকম লাগে, স্বতন্ত্র লাগে। রাস্তা থেকে চোখ পড়লে তারা সমষ্টি হয়ে দাঁড়ায়। আমিই শহর। এইজন্য বহুদিন অ্যাটলান্টায় ঢুকিনি। ইন্টারস্টেট পঁচাশি ধরে ওঠানামা করেছি কেবল। শিরা ধমনীর মতো কতগুলো রাস্তা জট পাকিয়ে রেখেছে শহরটাকে। পঁচাশি। পঁচাত্তর। কুড়ি। পঁচাত্তর ধরে সোজা উত্তরে উঠতে থাকলে এ’রকম আরেকটা শহর দেখা যায়। অ্যাটলান্টা যদি সমুদ্রগর্ভের লুপ্ত শহর হয়, সিনসিনাটি তবে এল ডোরাডো। হঠাৎ করে পাহাড় ছেড়ে উপত্যকায় নেমে এসে টিলা ঢিবির মতো গোলগাল জমিতে, ওহায়ো নদীর ওপারে কেনটাকি থেকে দেখতে পেয়ে যাই সিনসিনাটি। মেঘের মধ্যে বিচরণ করছে একটা মায়াবী শহর। তাকে অগ্রাহ্য করে পেরিয়ে চলে গেলে রিয়ার ভ্যিউ আয়নায় বিশাল হয়ে দাঁড়িয়ে সে পিছু ডাকে।

এ’রকম শহরে থাকলে বাড়ি ফেরাটা নাটকীয় হয়ে যায়।