– খয়েরি চিরুনিটা নিয়ে আয়।
– কোথায় আছে? *পাশের ঘর থেকে*
– আয়নার সামনে। ড্রেসিং টেবিলের উপরে।
– পাচ্ছি না।
– ভালো করে দ্যাখ!
– আরে দেখছি তো! ক্লিপ পাউডার টিপের পাতা সিঁদুর লিপ-
– গিয়ে যদি দেখি ওখানেই আছে…?!

একদিন। নয়। রোজ। রোজ। শুধু চিরুনি নয়। দারুচিনি। সোয়েটার। চপ্পল। আমার বই। বাবার চশমা। সেপ্টিপিন। উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজ বলতে মনে পড়ল। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের যে বিমানটা বিমান থেকে পপাত চ হয়ে জলাঞ্জলি গেল, মা কে পাঠালে খুঁজে বের করে দিত। দিতই। যাবার আগে শুধু একবার বলতে হত, “গিয়ে যদি দেখি ওখানেই আছে…”

ব্যাপার হচ্ছে তারপর মা একদিন কানছাবি না নাকের দুল কী একটা হারিয়ে ফেলল। খাটের তলায় ঝাঁট পড়ল। আলমারি তন্নতন্ন হয়ে আমার গুপ্তধনে টান পড়ে আর কী। পাওয়া গেল না। আমার “মা-সব-খুঁজে-পায়” থিওরিতে একটা সূত্র যোগ হল। মা সব খুঁজে পায় – যদি মা নিজে না হারিয়ে থাকে।

বেশ। মেঝে ভর্তি খবরের কাগজ, স্বরলিপির পাতা, আর থিসিসের কপির মধ্যে একটা ফর্ম হারিয়েছে। আঁতিপাতি করে খুঁজেছি। সারা দুপুর। মাকে ফোন করা যাবেনা। মাঝরাত। আমি জানি, পুকুরের ওপার থেকে বলছে “ওই কাগজের জঞ্জালের মধ্যেই আছে।” কোমরে হাত দিয়ে স্বখাত সলিলের দিকে তাকিয়ে প্রায় জোরেই বলে ফেললাম, “আমি গিয়ে যদি দেখি যে ওখানেই…” ফর্মটা রীতিমতো হাত তুলে প্রেজেন্ট স্যার বলে বেরিয়ে এলো। মানে ল্যাপটপটা একবার তুলতে হল। এতবার তুলেছি কিন্তু। মাইরি বলছি ছিলো না।

মোদ্দা কথা হল মায়ের সুপারপাওয়ার ছিলো না। মন্ত্রটা শিখে নিয়েছিল শুধু। ফর্ম হারিয়েছিলাম গত বেস্পতিবার। আজ শনি। একটা প্লেকট্রাম, ফোনের চার্জার, চাবি, গোলমরিচের কৌটো, চায়ের ছাঁকনি, আর এই এক্ষুণি নখ কাটার ওই জিনিসটা। আমি জানি বাথরুমে আয়নার সামনের ড্রয়ারে রয়েছে। হাঁটকে হুঁটকে সব কিছু তোলপাড় করেও পেলাম না। ড্রয়ার বন্ধ করলাম। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে শুধু একবার বলতে হল। “আমি গিয়ে যদি…” ড্রয়ার খুললাম। দর্শকাসনে প্রবল হাততালি। তালিও কি গুরগুরাহাট। নেলকাটার টা জ্বলজ্বল করছে। খুব কাজের মন্ত্র।

মন্ত্রটা জানা থাকলে জাভেদ মিঞা পিছলে সাত দিঁনো মে গানটা লিখতে পারতেন না বোধহয়।