ছই ছই করে হাঁচি আসে। আমার। সবার। আসতে যেতে হাঁচি। মুখ দেখতে পাই না। ছাতার তলা থেকে হ্যাঁঅ্যাঁচ্ছি ভেসে আসে। মনে মনে মায়ের মতো “জিও” বলি। আমি হাঁচলে আকাশবাণীর মতো “ব্লেস ইউ” ভেসে আসে কখনও। জগৎ ভিজে ন্যাতা হয়ে রয়েছে। ভালো করে নিংড়ে দাও তো ঠাকুর? আর ঠাকুর… করিডোরে সবাই লক্ষ্মীঠাকুরের পায়ের ছাপ ফেলতে ফেলতে গেছে। কত জোড়া! কারুর ছাতা থেকে টিপটিপটুপটুপ। ছাতাদেরও পায়ের ছাপ হয়। প্রত্যেক ছাতার আলাদা আলাদা ছাপ। এই একটা খেলা হয়েছে। ক্লাসে একজন করে হাঁচছে, আর বাকি ক্লাস ব্লেস ইউ বলে উঠছে। আমিও হাসছি। একদিন ধুতি পরে ক্লাসে আসব। টিকি রেখে। দেখি কী বলে। দেড় ঘন্টা দেড় ঘন্টা করে দু’টো ক্লাস, আমি স্যার স্যার খেলি। রোল কল করি। কাজ দিই। হাত তুলে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। আজ ইচ্ছে করছে না উত্তর দিতে। নাক কান থেকে চিমনির মতো ধোঁয়া বেরোয়। গরম কিছু গলায় ঢালতে মন করে। শীতল সহ্য করা যায়, কিন্তু গোটা পৃথিবীর কপালে এমন শীতলপাটি অসহ্য। মাথা ভিজে মোজা ভিজে। পৃথিবীর চামড়া কুঁচকে যায় এত জল ঘাঁটলে।
মাথাব্যথা বড় কঠিন বস্তু। মাথাব্যথা বড় তরল বস্তু। মাথার ডানদিকটা ধরে আছে। একটা ভারী দ্রবণ গুলুগুলু করছে। ইচ্ছে করছে কান ফাটিয়ে দিই। বেরিয়ে যাবে। যাচ্ছে না। সামনের সারিতে একটা সোনালি চুল মেয়ে ছাতা আনেনি। রেনকোট ঝুলিয়েছে চেয়ারের হেলানে। সোনালি চুলে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। আমি জানি বতু একটা বেগুনি ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে। বেগুনিই তো? নাকি অল্প আলোয় দেখতে ভুল করলাম? যাই হোক। নিয়েছে। সে’টাই বড় কথা। না নিলে বিন্দু বিন্দু শিশির। সেগুলো ঘাসচুলের গোড়া বেয়ে মাথামাটিতে সেঁধোবে। তারপর কুঁয়ো খুঁড়ে বের করতে হবে। যেমন আমার মাথায় হয়েছে। গাঢ় সবুজ তরল মাথার ডানদিকে। কপালে। চোখের উপরে। কেউ দেখলে ভাববে চোখ মারছি। বাঁদিকের দেওয়ালে মাথা হেলান দিয়ে বসলে তরলটা অল্প অল্প করে সেই দিকে সরে যায়। মাধ্যাকর্ষণ। ব্যস। বাঁ কপালে ব্যথা। এ’টা একটা মজা। ভারী বাজারের থলি বা ভরা বালতি বইবার সময় যেমন এ হাত ও হাত করা যায়, সেইরকম মাথার তরলটা এ কপাল ও কপাল করছি। মাথা পিছনে হেলালে কী’রকম হয়?
বতু আমাকে দেখলে একটা উষ্ণ শুকনো তোয়ালে দিয়ে মাথা ঝাঁকড়িয়ে মুছে দেবে। গাল টিপে ধরে মায়ের মতো চুল আঁচড়িয়ে দেবে। লাগবে। চুলে জট। চান করিনি তিনদিন। ঠাকুর তুমি পৃথিবীর মাথা মুছিয়ে দাও তো! লক্ষ্মী ঠাকুর! হাহ্ করে একগাল নিঃশ্বাস ছাড়বে। আমার চশমা ঝাপসা হয়ে যাবে। বতুকে দেখা বারণ। জানো ঠাকুর, প্রণাম করেছি। পায়ে হাত দিয়ে। হাজার হোক, ঠাকুর তো।
মাথার তরল নাক বেয়ে নেমে আসছে। ভাক্রা নাঙ্গাল হয়ে।
করোনাকালের আগের সব ফ্যান্টাসি। 🤭
LikeLike