“সরে দাঁড়ান সরে দাঁড়ান থামবে না কিন্তু মাইরি বলছি থামবে না আরে সরুন সরুন–” করতে করতে একটা ছাড়া-গরু-মাফিক ট্রেনের মুড়ো দৌড়ে বেরিয়ে গেলো প্ল্যাটফর্মের গা ঘেঁষে। ঘোষণাওলা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আমার খালি মনে হত একটা লোক স্টেশনের পাশের একটা উঁচু কোথাও, টঙে বসে খালি ট্রেন দেখে। এদিক আর ওদিক। একখানা বেশ দূরবীন আছে। দু’চোখ ওলা নয়। একচোখো। লম্বা নল। তাই দিয়ে ট্রেন দেখলেই চেঁচায়। “আসছে আসছে! দুই নম্বর পেলাটফর্মে আসছে ডাউন ঊনিশশো বত্রিশ হারাকিরি এক্সপ্রেস!” আমার বড় হয়ে সেই চাকরিটা করবার ইচ্ছে ছিল। সারাদিন ট্রেন দেখা যাবে। ট্রেন দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।

আপাতত একটা লাল হলুদ ইঞ্জিন পাঁই পাঁই করে ছুটে গেল। ঘোষণাওলা তাকে দেখতে পেয়েছিল দেরিতে। নিশ্চয়ই তাই। দেখতে পেয়েই “সরে দাঁড়ান সরে দাঁড়ান” ত্রাহি ত্রাহি রব। ইঞ্জিনটারও বলিহারি যাই। সারা জীবন পিছনে বাইশ কামরার বোঝা টেনে ক্লান্ত একটা মানুষ যদি হঠাৎ আবিষ্কার করে আর কিছু টানতে হচ্ছে না তাকে, সে কী’রকম জোরসে ছুট টা দেবে?

কেন যেন মনে হচ্ছিল ইঞ্জিনটা পালিয়ে যাচ্ছে। পিছন পিছন ট্রেন-পুলিশ ধাওয়া করবে। “অ্যাই ব্যাটা! পিছুটান কাটানো অতো সহজ? পালাচ্ছিস কোথায়?” বলে থপথপ করতে করতে আমাদের স্টেশনে এসে দাঁড়াবে। এসে জিজ্ঞেস করবে, “কোন দিকে গেছে রে?” আমি মেন লাইন দেখিয়ে দেবো। তর্জনী দিয়ে। যেন আমি দেখিনি মুড়ো কর্ডের দিকে বেঁকে গেছে।

যাক ও। পালাক।