বাড়ি থেকে অতিথিদের মায়াচাদর উঠে গেছে। দরজার বাইরে চটিজুতোর স্তূপ উধাও। বড়রাস্তার মোড় অবধি তাদের ছেড়ে আসা হয়েছে। অটো পাওয়া অবধি দাঁড়িয়ে থাকা হয়েছে। “আবার আসবে কিন্তু!” “না, এবার তোমরা একবার এসো আগে!” – এ’সব ও হয়েছে। ঝিমুনি নিয়ে আড়ষ্ট পায়ে ঘরে ফেরা হয়েছে। তারপর একটা সারা-সকালের বিনুনি খোলা মেয়ে কাঁচুলি পরে এঁটো ঘর গুছিয়েছে। ধুলো ঝেড়েছে। চাদর পাট করেছে। উঠোনটুকু নিঙোনো বাকি রয়েছে কেবল। তারপর হাতের পিঠে ঘাম টুকু মুছে বিছানায় এসে শোবে। টেবিলপ্রদীপ এর আলোয় স্যাণ্ডো গেঞ্জি চশমা নাকে বাসি খবরের কাগজ পড়ে নিচ্ছে। সারাদিন কিচ্ছু করেনি কিন্তু। কুটোটি নাড়েনি। চা করে খাইয়েছে দু’বার। একবার চল্কে ফেলে কাজ বাড়িয়েছে। বাজার করতে গেছিল অবশ্য। রান্নাতেও যে হাত লাগায়নি একেবারে, তা নয়। কিন্তু ঘর সাফাই এর বেলায় কোমর বেঁকে না।
এত্তখানি জায়গা কিন্তু বিছানায়। যত কাঠা জমি বাকি আছে বিছানায়, তাতে পাতাবাহার আর প্যানসির সারি গজিয়ে উঠবে তরতর করে। বেগুনের চাষ হবে। সর্ষে ক্ষেত এঁটে যাবে। সেই শূন্যতায় পাশবালিশের রাজত্ব। তবু স্যাণ্ডোগেঞ্জিকে ঠেলে খাদের কিনারায় নিয়ে যাওয়াই দস্তুর। মুখেচোখে জল দিয়ে আসার পর ভিজে হাতটা পিঠে মোছাই আইন। মুখে টুথপেস্টের গন্ধ নিয়ে চোখ কচলিয়ে “এবার একটা গল্প বলো তো!” বলাটা ঐতিহ্য। কাঁচুলির একটাই গল্প ভাল্লাগে। একটা হলুদ রঙের গল্প। ছুটন্ত ট্রেন। পড়ন্ত রোদ। ডাকন্ত নাক। কই??? গল্প কইইইই? এক যে ছিলো রেলগাড়ি। তাতে আর কেএএউ চড়ে না। পুঁ উউউউউই কুতকুতকুত করতে করতে সে গাড়ি রাতবিরেতে বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যায়। ইঞ্জিনটা খোঁজে। ডাকে। কই? আমার বতু কই? বতু বগলের তলায়। বগলের তলায় লাল নীল ছোপ। কে মাখিয়েছে রে আবির তোকে? কে বলেছে, চশমা খুললে ভাল্লাগে? চশমা খুললে শুধু কাছের টুকু স্পষ্ট হয়ে থাকে। বোকা। দূরের যা কিছু তো ছুমন্তর। ওই গণ্ডি টুকুর মধ্যে তোমার আমার লাল নীল সংসার।
তারপর পর্দা নেমে আসে। তাতে একটা ছোট্ট ছিদ্র। মনসার বাহন কোনদিন উঁকি দেবে! একদিন দেবে। যেদিন। সেদিন। তদ্দিন লখীন্দর পরিপাটি একটা ঘর অগোছালো করবে। পরিপাটি কিছু চুল উস্কোখুস্কো করবে। পরিপাটি কিছু সময় নছতছ করবে। আর বেহুলা বলবে, “এবার আমায় দিয়ে আয়।”