কী চাই? টেবিল ফেবিল উল্টে দিয়ে চেয়ারের তলার চাকা গড়গড়িয়ে ফাঁকা ঘরটায় একটা পাক খেয়ে আসি। আজ একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। এস্পার নয় ওস্পার। রোজ রোজ সক্কাল সক্কাল এই ঘ্যানঘ্যানানি ভাল্লাগে না। এমনিতেই আটটা উনিশে উঠে সাড়ে আটটার ক্লাস পড়াতে হয়েছে। দাঁত ও মাজতে পারিনি। তার উপর এই সব ফালতু ঝামেলা ভাল্লাগেনা। ফাঁকা ঘরে চেঁচিয়ে শুধোই। “কী চাই? চাই টা কী?”

তারপর মিনমিন করি। একটা স্টিলের প্লেটের উপর কলাপাতা। তার উপর একটা ধোসা। একটু নারকেলের চাটনি। আর একটা ছোট্ট স্টিলের গেলাসে একটু ফিল্টার কফি। সমুদ্রমে দশ টাকায় একটা মাইসুরু ধোসা দিত। তিন টাকায় কফি। মেইন বিল্ডিং এর ছাদে উঠে খেতাম বেলা দশটার সময়। কারণ যথারীতি মেসে ব্রেকফাস্ট খাইনি। কারণ যথারীতি ঘুম থেকে উঠিনি। পেট চুঁইচুঁই। আজো।

নিজের উপর নিজের গোঁসা নরম হয়ে আসে। সত্যি ই তো। আমার আর দোষ কী? সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি। এই পেটে পড়ার কতরকম মানে হয়। এই যদি সন্ধ্যের দিকে তিনটে আধা হোঁচট খেয়ে অনির্বাণ আমার খোলা দরজায় এসে টোকা মারত, জিজ্ঞেস করতাম, “পেটে কিছু পড়েছে মনে হচ্ছে?” অনির্বাণ বাসি দর্শনে অমলেট ভেজে বলত, “খুব কি দামী কিছু চাই জীবনে? এই যে বিকেল বিকেল মাসির দোকানের লঙ্কাগুঁড়ো ছড়ানো ডিমসেদ্ধ। বা বেস্পতিবার রাত্তিরে ন’দিন ভেজ খেয়ে আর থাকতে না পেরে ধাবা থেকে আন্ডা ভুর্জি এনে
মেসে সম্বরের সাথে খাওয়া। আর তো কিছু চাইনে।” একটা অনুচ্চারিত “তবু” থেকে যায় দীর্ঘশ্বাসে। আর আমি সাড়ে আট হাজার মাইল দূরে এগারোটার সময় একটু ধোসা কফির জন্য ডুকরে কাঁদি। মন কেমন কি শুধু রোল চাউমিন পেঁয়াজ পোস্ত চুরমুরের জন্য হয় হে? কখনও কখনও সুদূর দাক্ষিণাত্যের একটা অজতম পাড়াগাঁয়ের ছেলেদের হোস্টেলের বাইরে লুঙ্গির উপর শার্ট পরা দা হাতে দাঁড়ানো ডাবওলাটার জন্যও হয়। নন্দিনীর দুধের জন্যও হয়। শেট্টির দোকানের এগ পাফের জন্যও হয়।

আমি জানি, কোনও একদিন ফাইভ গাইস এর বার্গারের জন্যও হবে। আমার আদরের ক্লাইভ লয়েডের দোকানের ফালাফেলের জন্যও হবে। চিক ফিলের ফ্রিতে পাওয়া পেট টিপলে পুচুৎ করে বের হওয়া মেয়োনিজের প্যাকেটের জন্যও হবে। কিন্তু সে’সব অন্য শেয়ালের গল্প। ডিপার্টমেন্ট অফিসের বারান্দাটা এখন দারচিনি আর কফির গন্ধে ম’ম’ করছে। জো অ্যান কে বললে এক কাপ দেবে। কাগজের কাপে। দুধ। ঘোল ইত্যাদি।