নিম্নে তাকাইলে মস্তকে ঘূর্ণন হয়। মণ্ডূকটি শ্যাওলা-পরিহিত পাঁচিলটির উপর হইতে গলির অপর পাড়ের নিকাশি নালাটিকে নিরীক্ষণ করিতেছিল। ওইখানে তাহার মুক্তি, তাহার স্বদেশ। তাহার জন্মভূমি। প্রবল ক্ষুধায় ও কিয়ৎ একটি স্ত্রী-ভেকের সুমধুর সঙ্গম-ধ্বনিতে আকৃষ্ট হইয়া মণ্ডূকটি থ্যাপথ্যাপাইয়া গলিপথের এই পাড়ে আসিয়াছিল। পাঁচিলে একটি ছিদ্র ছিলো, ভিনরাজ্যে প্রবেশ করিতে তাই তাহাকে বেগ পাইতে হয় নাই। এই রাজ্যে আসিয়া তাহার ক্ষুণ্ণিবৃত্তি হইয়াছে। মশকের অভাব নাই, তাহা নর্দমানগরেও বর্তমান। কিন্তু এই উঠোনপুরীতে এক দু’টা উচ্চিংড়ে ও গঙ্গাফড়িং মেলে। মণ্ডূক রতিসুখ হইতে বঞ্চিত হইয়াছিল বটে। গাঢ় হরিৎ একটি কদাকার কোলাবংশীয় ভেক ব্যাঙডাকাতি করিতেছিল, তাহার চক্ষের সামনে। ক্রোধে, ফ্রাস্টুতে, হতাশায় সে কেমন করিয়া পাঁচিলে আরোহণ করিল তাহা তাহার ঊর্ধস্তন চৌদ্দ পুরুষ ও বলিতে পারিবে না।

 
কুমার বাপ্পাদিত্য অবশেষে ব্যাটিং পাইলেন। পাপাইনাথ এবং টুকাইশংকর এর যৌথ ষড়যন্ত্রে তাহাকে আম্পায়ারের ভূমিকায় দাঁড়াইয়া থাকিতে হইয়াছিল দীর্ঘ চার ওভার। একফালি পোড়ামাটির টুকরোর পশ্চাতে দাঁড়াইয়া তিনি আসন পুনর্দখল করিবার ফন্দি আঁটিতেছিলেন। ব্যাটখানি তাহার। সেটি লইয়া বাড়ি চলিয়া যাইবার হুমকি তিনি দিতে পারিতেন বটে, কিন্তু গুল্টুগুপ্তর পিতামহ তাহাকে একটি নূতন ব্যাট ক্রয় করিয়া দেওয়ায় সেই পথ বন্ধ। ইহাকে ইংরিজিতে মোডাস কাঁচাভেন্ডি না জুলাইমাস সীজার কিছু একটা বলা হয়। যাহা হউক, প্রবল কূটনীতিক বুদ্ধি খাটাইয়া বাপ্পাদিত্য টুকাইশংকর কে রানআউট ঘোষণা করিয়া দিলেন। টুকাইশংকর হাত পা নাড়িয়া বোঝাইবার চেষ্টা করিতেছিলেন যে তিনি দেড় মিনিট পূর্বে ক্রিজে অবতরণ করিয়াছিলেন, কিন্তু অপরপক্ষ মানিতে নারাজ। তাহারা বলিল “আম্পায়ার তোদের টিমের। ব্যস। শেষ কথা।” বাপ্পাদিত্য গম্ভীর মুখে বলিলেন “ব্যাট হাওয়া মে থা। ভালা কি আপনে ক্রিজ মে ঘুস গ্যয়ে থে, লেকিন ব্যাট হাওয়া মে থা।” এতদ্বারা বাপ্পাদিত্য ব্যাট হাতে ইষ্টক নির্মিত উইকেটের সামনে আসিয়া দাঁড়াইলেন। দাঁড়াইয়া বুঝিলেন কেস সুবিধার নহে। গলিপথ সঙ্কীর্ণ। সম্মুখে পশ্চাতে পাঁচিল। সেই পাঁচিলে ফুলটসে বল লাগিলে আউট। ব্যাটের নিকটে দাঁড়াইয়া বাপনচন্দ্র নাসিকা খুঁটিতেছে। এক সোজা না চালাইলে রান করা সম্ভব নহে। তাহার উপর ইহা অন্তিম ওভার। চার ওভার বরাহনন্দনগুলি ভক্ষণ করিয়াছে। গুল্টুগুপ্ত “রাইট আর্ম ওভার” বলিয়া বলক্ষেপ করিল। ওভারপিচ।

 
অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করিয়া কূল না পাইয়া চক্ষু মুদিয়া মণ্ডূক পাঁচিল হইতে লম্ফন দিলো।
বাপ্পাদিত্য ধাঁই করিয়া ব্যাট চালাইলেন। বলটি উইকেটের পিছনে রাখা পাপাইনাথের সাইকেলের ঘন্টিতে আঘাত করিল। বাপ্পাদিত্যের ব্যাট আঘাত করিল একটি ক্ষুদ্র কিছুতে।
মণ্ডূকের মস্তক চ্যাপ্টাইয়া রহিল বাপ্পাদিত্যের ব্যাটে। মণ্ডূকের দেহ পচাৎ করিয়া গুল্টুগুপ্তের মুখে লাগিল।

 
বাপ্পাদিত্য বলিলেন “এমাঃ”