ল্যাম্পপোস্টের গায়ে পাকানো ছিল দড়িটা। নিরিবিলিতে পুড়ছিল একটা মাথা। মেয়েটা এসে তার একটু আগুন ধার নিয়ে গেল। সিগারেট পোড়ারও আওয়াজ আছে। ক্ষীণ। দড়িটাকে তার একাকীত্বে ফিরতে দিয়ে মেয়েটা সরে গেল গলির সঙ্কীর্ণতায়। প্রত্যেকবার একটা সিগারেটের সঙ্গে একবাক্স দেশলাই কিনতে গায়ে লাগে। হোক দাম একটাকা। অতগুলো কাঠি… বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। টিকটিকির আখ্ড়া। কেউ কেউ লাইটার এগিয়ে দেয়। সাহেবি কেতায় জ্বালিয়ে দেয় না। অবহেলা ভরে ছুঁড়ে দেয়। বুড়ো আঙুলে ঘষা লাগে। দড়ি ই ভালো। আজকাল বড় একটা কেউ দড়ি রাখে না। স্বপন পান স্টোর্স রাখে। ক্লোরোমিন্ট রাখে। শিখর। রজনীগন্ধা। পান পরাগ। মৌরি। ললিপপ। জিভ সবুজ হয়ে যায়। অতসীদের হেলানো ছাদে বসে প্রেম, ভালোবাসাবাসির জন্য ফাঁকা ঘরের সন্ধান, আর মাসিক না হওয়ার দুশ্চিন্তা নিয়ে আলোচনা করতে করতে জিভ সবুজ করেছিলো তারা। একেক দিন তরল-বায়ুর থেকে এই কঠিন নেশাতে কাজ দেয় বেশি। স্বপন পান বানাতো আগে। মশলা, খয়ের, জর্দা, চুন। খবরের কাগজে মোড়া শঙ্কু। শঙ্কু বললেই প্রোফেসর। প্রোফেসর বললেই ক্যালকুলাস। ক্যালকুলাস বললেই কালকে-বাইভেরিয়েট-অ্যানালিসিসের-অ্যাসাইনমেন্টটা-সাবমিট-করতে-হবে। সাদা শরীরের হলুদ ল্যাজাতে আরও ঘন ঘন টান। মুড়ো পুড়ে চলে। দড়িটাও।
মুড়ো ল্যাজা এক হয়। তর্জনী আর বুড়ো আঙুলের টোকায় স্থান হয় ড্রেনে। সিগারেট নেভারও একটা আওয়াজ আছে। ক্ষীণ। “একটা পাল্স কেন তো। গন্ধ পাবে।” অনুসারী শিল্প। সিগারেট শিল্প উঠে গেলে ক্লোরমিন্ট দের কী হবে? “ভাববি পরে। চল এবার।” ত্রিভুবন উজাড় করে রিকশা সন্ধান হয়। পাড়ার দোকান থেকে নাকি সিগারেট কিনতে নেই। ডাক্তার নাকি বাবা লোকনাথ মানা করেছেন। ছ টাকার তামাক কাঠি। এক টাকার মুখশুদ্ধি। বারো দুগুনে চব্বিশটাকার রিকশাভাড়া। হুঁ। একটু হাঁটতে কী হয়? “উফ্। অযথা। বড্ড গরম।” রাণী সেরসেই একচুল সিংহাসন ছাড়তে রাজী নন। আর রিকশায় দাঁড়িয়ে যাওয়া যায় না। ময়লা হাফপ্যান্ট স্যান্ডো গেঞ্জি সারথি দাঁড়িয়ে চালাতে পারেন অবিশ্যি। একটা হাতলের উপর পাছা ঠেকিয়ে অধমের নিত্যযাত্রা। “শেতলা মন্দির।” চল পানসি কিং’স ল্যান্ডিং।
ভীত সন্ত্রস্ত প্রজারা রাণীরথের রাস্তা ছেড়ে দেয়। কী জানি, প্রণামও ঠোকে হয়ত। সারথির সে কী তেজ! স্যুইফ্ট, ইন্ডিকা গুলো দেওয়াল ঘেঁষে ব্রেক কষে। নিজেদের খিস্তি হজম করে। মহারাণীর রিস্কা বলে কতা। অধম প্রাণ আর “আর খেতে পারছিনা, চাউটা প্যাক করিয়ে নে” প্যাকেট হাতে সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স এর সাথে লড়াই করতে থাকে। বারো টাকার রোলার কোস্টার। বারোহাজারি অপকেন্দ্র বল। ছিটকে বাইরে পড়লে না…! “আজকাল খুব পয়সা পয়সা করছিস তুই।” গাঁয়ে বড় আকাল, বেগমসাহেবা, প্রজারা খাজনা দেয় না ঠিকমতো। ফিক্সড ডিপোজিটের সুদ কমিয়ে দিয়েছে।
একেকদিন, খুব একেকদিন, হেঁটে ফেরা হয়। রেললাইন ঘিরে বসতি। তার উপর দিয়ে ব্রিজ। প্রশস্ত ফুটপাথ। হেঁটে ফেরা হয়। “বড্ড চেনা লোক। কারুর না কারুর সাথে ঠিক হয়েই যাবে দেখা। সিগারেটটা পকেটে রাখ। মোচরাস না।” রাজসম্পদ। অধম রাজকৌষিক। অধম বাজেট করে দেবার চেষ্টাও করেন। কিন্তু অধমের চোখ অপর্ণার মত মায়াভরা নয়। তাই পকেটের গহীন ডেরায় রুমালে মুড়ে শীতঘুম দেয় টোটাল। নেভি কাট। গোল্ড ফ্লেক। দূরদেশের দূত এলে মার্লবোরো। তারপর অনেক-খেয়ে-ফেলেছি-একটা-দিবি? বড্ড-গরম-একটা-দে। মাথা-ধরে-গেছে-একটা-দে-তো। জগজ্জননীর কাছে গোটা দুনিয়াটা অ্যাশট্রে। কোন এক প্রস্তরযুগীয় বাড়িতে এখনও সন্ধ্যে সাতটার ডিডি বাংলার খবর শোনে। জুরাসিক যুগের ইস্তিরিওলা শোনে কলকাতা ক। “এ লগন রাই ভুলো না” এঁচোড়ে পাকা ফাল্গুন। অধৈর্য্য রাণী কলিং বেলে আঙুল পাকান। “মাসি, দজ্জা খোলো!”
দরজায় পার্বণ শেষ হয়। এরপর অধমের ওডিসি। নানা। নাচ না। বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করে ঘরে ফেরা। যাদবকুলের জ্যাম। সিগনাসুরের রক্তচক্ষু। পাথেয় দিতে চেয়ে মাসির প্রস্থানের পর ঝুঁকে পড়েন সর্বেসর্বা। তামাকের স্বাদ ছাড়িয়ে ঠোঁটের আর্দ্রতা। অধম মুখে-লিপস্টিক-হাতা-গোটানো-ফুলশার্টের-নীচে-শান্তিপুরি-ধুতি উত্তম হয়ে ওঠে।
Like this:
Like Loading...
Related
Aparna naki Sharmila hobe ? Apni Apur Sansar mean korchilen na ?
LikeLike
শর্মিলা অভিনেত্রীর নাম। অপর্ণা চরিত্রটির নাম। 🙂
LikeLike