র- তাহলে কাল দেখা হচ্ছে?
– হুঁ?
– মন কোথায় তোর?
– এই তো। বল।
– কাল।
– হুঁ। না। না। হচ্ছে না।
– হ্যাঁ। ঠিক। এখন রাত দেড়টায় বল যে কাল হচ্ছে না বিয়ে।
– হলে তো হয়েই যাবে। মানে…
– মানে?
– খুব সহজে হয়ে যাচ্ছে না?
– তাই বলে এখন? পেট গুলিয়ে উঠছে ব্রাদার, এখন এসব বলিস না। বিয়েফিয়েসংসারফংসার এসব রান্নাঘরের উপরের হাত-না-পাওয়া তাকে রেখে কাল মালাবদলফদল। তুই বলছিস সহজে?
– সহজে না? তোর বাড়ি, আমার বাড়ি কেউ আপত্তি করে নি। তোর বাবা গুন্ডা লাগায়নি, থ্রেট করে নি। নো ভিলেন। পান্সে হয়ে যাচ্ছে না?
– আমায় পান্সে বললি?
– উফ্! তুই না। গল্পটা। বেশ একটা মাখোমাখো প্রেম হলো তো? নো অর্ডিনারি প্রেম? তাই তো? রেস্তোরার বদলে গোরস্থান আর সিনেমার বদলে টেরিটি বাজার? ভাব। একটা মাস্টারপিস লেখা। একটা ক্রাইসিসের মধ্যে দুটো চরিত্রের দেখা। তাদের কথোপকথন এর মধ্যে দিয়ে গল্পটা এগোচ্ছে। শানাচ্ছে। একটা দেড়শো বছর আগের নাবিকের সাথে সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে। শাঁখারীটোলা লেনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিঁদুরে আকাশের সিল্যুয়েটে গোটা শহরের স্কাইলাইন। শেয়ালদা দক্ষিণ শাখায় ট্যানারির গন্ধে ভালোবাসা আবিষ্কার করা। একটা আদ্যিকালের নতুন শহরের মানচিত্র, আবিষ্কার করার পর কাল স্রেফ বিয়ে হয়ে যাবে? হ্যাপিলি এভার আফ্টার? এইভাবে শেষ হবে উপন্যাসটার? “তাহারপর উহারা বিবাহ করিয়া ঘরকন্না করিতে লাগিল?”
– কই আর? আমি দুর্যোগের ঘনঘটা দেখতে পাচ্ছি।
– হ্যাঁ। ঠিক প্রান্তে এসে ছিট্কে যাওয়া। তুই ওর কাছে ফিরে যা?
– আর তুই?
– আমি মায়ের দেখে দেওয়া রোগা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করি।
– তারপর?
– তুই ভালো থাকবি না আমায় ছাড়া। আমিও না।
– ওমা! তাই?
– চুপ কর। তোর প্রতিটা কথা শুনে ও “অ্যাঁ” বলবে। তোকে ও বুঝবে না। যেমন করে আমি বুঝি। বুঝবে না। তুইও খেই হারিয়ে ফেলবি। তোর কষ্ট হবে আমি নেই তাই। ওর ভিতরটা চুরমার হয়ে যাবে রাতে শুয়ে তুই আমার নাম নিলে।
– আমি রাখি ফোনটা।
– আমি কিন্তু ভালো বর হবো। বউটা আমার প্রেমে পড়বে। আমি ওর থেকে কিচ্ছু লুকোবো না। ও জানবে যে ও কিছুতেই তুই হতে পারবে না। আমি ওর সাথে শোবো, শহর চেনাবো। সারাদিন আমার সাথে ঘুরে যখন ওর আহ্লাদ হবে খুব, ভাববে, এইত্তো, ভালোবাসছে আমায়, আমি বলবো, এইখানটায় দাঁড়িয়ে তুই আমার হাত টেনে রেখেছিলি তোর বুকের উপর। আমি ওর ভাঙার শব্দ শুনতে পাবো।
– কী নিষ্ঠুর তুই!
– আমি? কতজন তাদের বউকে অত ভালো রাখে রে? সে হবে আমার হরিহর আত্মা। আমি নীরবে দেখব ওর চেষ্টা। কোনও অভি্যোগ থাকবে না ওর। শুধু প্রতিক্ষণে টের পাবে, ও তুই নয়। হবে না কোনোদিন।
– দোহাই তোর।
– চারটে বয়ানে গল্পটা লেখা হবে। আমি লিখব। মেয়েটা মরে যাবে শেষে। তোর জন তোর জীবন বিষিয়ে ছেড়ে যাবে তোকে। খুঁজে পাবি না। বইটা বেরোবে। খুব ভালো লেখা হবে জানিস? হইহই পড়ে যাবে। কিন্তু সেটা দেখবার জন্য থাকব না আমি। পার্ফেক্ট ট্র্যাজেডি।
– কালকে ইলিশের সর্ষে পাতুরি রেখেছে মেনুতে। বাদ দিয়ে দিতে বলব?
– টোপর পরলে কেমন জোকার জোকার লাগে।