“মেঘগুলো নড়ছে, না পৃথিবীটা?”
 
দু’টোই। কিন্তু আপাততঃ একটা বিশাল মেঘের পেটের তলা দিয়ে বেশ কয়েকটা কাচ্চাবাচ্চা মেঘ উত্তরদিকে এগোচ্ছে। ছাদের রুক্ষ মেঝে তবু পিঠে কোমল লাগে। শুয়ে এ-দেওয়াল থেকে ও-দেওয়াল দিগন্ত বানিয়ে দিব্যি তিনশো ষাট ডিগ্রীর ভ্রম হয়। হঠাৎ করে ছোট্ট লাগে নিজেকে। নিজেদের। ভরশূন্য লাগে। নীচে নামছি তো নামছি তো নামছি। পেটের ভিতর গুলুগুলু গুলুগুলু। ওমনি চোখ চেপে মাথা গুঁজে দেওয়া আমার বুকপকেটে। অতল অসীম পকেট আমার। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কলার। আড়বাঁশির কলারটিউন। শজারুর গুটিশুটি। কাঁটা বেছে খেতে হয় না। 
 
পৃথিবীটা আমাদের পিঠে নিয়ে বাঁইবাঁই চক্কর। এই না তুই নাগরদোলায় ভয় পাস? এই না তুই নাগরদোলাকে নাকরদোলা বলিস? পিঠের উপর থেকে ছিট্কে‌ সোওজা… চুপ! ফের গুলুগুলু। ফের পকেটে মুখ লুকানো। ছাদটা একদিকে হেলানো। ভাগ! সত্যি! গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি ওই দিকে! কোনও কথা বিশ্বাস করিস না আমার! ভূমিকম্পে একদিক বসে গেছিলো। সত্যি। শ্রাবণের ধারার মত গড়িয়ে ছাদের ছোট্ট নালার মধ্যে দিয়ে কুলুকুলু রবে রেনপাইপ বেয়ে টালা-বেহালা-গার্ডেনরীচ-গঙ্গা-ঝপ্পাস। গুলুগুলু। পৃথিবীটা ভয়ানক জায়গা। 
 
“মেঘটা যদি আমাদের উপর পড়ে যায় অত বড় শরীরটা নিয়ে?”
“ধুর বোকা। মেঘই তো। পাহাড়ে মেঘের মধ্যে দিয়ে হাঁটিস নি?” কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দি। 
মেঘটা বেয়াদপের মত নীচে ঝুঁকে আসে। চোখ টিপি। চোখ গোল্লা গোল্লা করে ধমকাই। এ’রকম কথা ছিলো না। একটা অবসন্ত বিতিকিচ্ছিরি মার্চকে পাস্ট করে শীতল করার কন্ট্র্যাক্ট ছিলো। এ’রকম ছিলো না। ও বাবাগো। নাকের ডগায় সুরসুরি লাগে ভেবে, এই লাগল ছোঁয়া। মেঘের। সেই দুর্ধর্ষ কালো মেঘ। মুক্ত পতন ও চৌচির। গলার কাছে মূর্ছা মূর্ছা লাগছে। পেটে ইয়ে। গুলু। হুশ হুশ করে বেড়াল তাড়ানোর মত করে মেঘ তাড়াই। উলটে ওই দূর থেকে একটা আলগা ফোঁটা চল্‌কে উঠে পুট করে চোখের তলায়… চমকে পকেটের ভিতর কচ্ছপ। খোলস থেকে মুন্ডু বের করে “বৃষ্টি নামল?” খোঁজ নেবে। 
 
আমার খুব ইচ্ছে করে খোলসের তলায় ঢুকি। ভিতরটা উষ্ণ। নরম। পুই পুই করে চুল্‌কে দি। এমা ছিঃ। ও আছে না। অগত্যা জিভ সবুজ করে ললিপপ চুষি। তিন সংখ্যাটাকে গালিমন্দ করি। কান মুখ চশমা পকেট শজারু খোলস ভিজিয়ে ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। তিন নম্বর দুদ্দার করে সিঁড়ি ভেঙে মাইনাস। দুই নম্বর ধনুকের মত ভুরু কুঁচকে দু’হাত আড়াআড়ি করে “কীরে! ভিজে গেলাম তো!”
এবার আমার পেট। গুলুগুলু।
ছাদটা ডেঞ্জারাস জায়গা মশাই। এখানে থাকাটাকা চলবে না।