আবার কখনও রাতদুপুরের কলকাতার মত উর্বর, ঊষর। কলকাতার রাত দু’টো, তুমি কার? যে গায়ে মাখবে, তার। গলির ভিতর মাতালদের। টেবিল ল্যাম্পের তলায় টেস্টপেপারের। নির্ঘুম পেটের বরাদ্দ পাপড়ি চানাচুরের বয়ামের। কতশত নাইট ডিউটির। অবসন্ন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে জামা থেকে বেরিয়ে গায়ে জল ঢেলে ফ্রিজ খুলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা। আলিবাবার গুহা বন্ধ করে বিছানা অবধি টলমল পায়ে অভিযান করতে করতে উপলব্ধি করা, যে ফোন টিপে চাইনিজ অর্ডার দেবার শক্তিটুকুও নেই। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার ঘুমের প্রবলতা কোনও প্রেমিক, কোনও কবি জানে না। তারপর দু’টো তেরোয় ধড়মড়িয়ে উঠে বসা। ভেবলিয়ে খানিকক্ষণ নিজের অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ বোঝার চেষ্টা। প্রহর অনুমানের কোশিশ। তারপর ঘুমপরবর্তী স্টেশন এলে আবিষ্কার করা, যে খিদে পেয়েছে। খিদে একে বলে? তাক হাতড়ে বিস্কুট, মুড়ি বেরোয়। ক্যাবিনেট খুলে হুইস্কি। আয়নার সামনে ফার্স্ট এড বাক্সে একটু গাঁজা। কিন্তু খাবার কই? কে দিয়ে যাবে বাড়ি বয়ে এত রাত্রে হাক্কা ন্যুডলস। নিদেনপক্ষে ম্যাগি থাকলে… তিনবার হোঁচট খেয়ে ফের রান্না ঘরে। উঁহু। খোসা। ডিম অবধি নেই একটা। সাল্লা। ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে হাউহাউ কান্না। তারপর হাফপ্যান্টের উপর ট্র্যাকপ্যান্ট চাপিয়ে চিরুনি তল্লাশি কলকাতার জঙ্গলে। সেই রাত দু’টোর কলকাতার মত লাগে ওকে।
রাতদুপুরের কলকাতা। আমার মরূদ্যান। কুঁয়ো থেকে তড়কা উঠে আসে। কচ্ছপের পিঠে হাতরুটি। ক্যাকটাস থেকে ছিঁড়ে নেওয়া লঙ্কা। বালি হাতড়ে সন্ধান পাওয়া পেঁয়াজ। আমার মরূদ্যান। দুই হাঁটু গেড়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখি। মাথাটা রেখেই দি, ধড় থেকে আলাদা করে। ও মাথা বইবার ভার আর আমার নয়, ওর বুকের। নিরুত্তর প্রশ্নের, অমীমাংসিত ডুয়েলের ধাওয়া করা বন্ধ করি। ওর ঠোঁটে আঙুল বোলাই। বলি, “গোঁফ হয়েছে।” নিঃশ্বাসে অতীতের গন্ধ পাই। সিগারেট। রসুন। চুমু খাবার পর মুখের ভিতর চিপসের স্বাদটুকু রয়ে যায়। গলায় বেবিপাউডার। দরজায় দাঁড়ালে বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আভায় ঢোলা জামার ভিতর ঘোলাটে অবয়ব। মেঝেতে বুক ঘষটে এক হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়াও সার্থক। প্লাস্টিকের ব্যাগে খবরের কাগজে মোড়া রুটি আর ভাঁড়ে ডিম তড়কা। সার্থক। মৌজ। প্লাস্টিকের থালায় রুটি লঙ্কা পেঁয়াজ। শ্বাস চেপে জয় গঙ্গা বলে ভাঁড়ে ডুব। আঙুল থেকে গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। ঠিক যেখানে কালোর উপর ডোরাকাটা ওর অন্তর্বাস পড়ে ছিলো। একটা পা বেরিয়ে থাকে খাট থেকে। মৌজ। মশাদের। সিঙ্কে থালা। ময়লার বালতিতে ভাঁড়। গ্লাসে হুইস্কি। এক ছটাক জল। মৌতাত। জিভে চেটে কাগজ মুড়তে জানে ও। আমি জানি না। তামাক আর গাঁজার গুঁড়ো মেশাতে জানে। অঙ্ক কষে। আমি গোঁজ হয়ে তাকিয়ে থাকি। রাতদুপুরের কলকাতা। আমায় বিরাট কালো চাদরের মত মুড়ে রাখে। “এবার একটু ঘুমোবো, হুঁ?”