পিঠে চুলকুনি হচ্ছিল। নানারকম কসরৎ করে নির্ভুল অক্ষরেখা আর দ্রাঘিমা বরাবর হাত পৌঁছে কী একটা আঁচিল মত টের পেলো বিভু। নতুন দ্বীপ গজালো? অ্যাদ্দিন তো ছিলো না এটার অস্ত্বিত্ব! আঁচিল নয়, সেঁটে নেই পিঠের সাথে। আঙুল নাড়ালে ফরফর করছে। জামা খুলে আয়নার দিকে পিঠ করে ঘাড় বেঁকিয়ে বিভু দেখলো না-আঁচিল টা একলা নয়। গোটা পিঠ জুড়ে বেশ কটা ছোটবড় না-আঁচিল হয়ে আছে। আয়নার পাশের জানালার পর্দাটা ওঠালো বিভু। চড়চড় করে উঠল পিঠটা। ফটফটে আলোতে বিভু দেখল তার পিঠে ছাতা গজিয়েছে। ব্যাঙের ছাতা। চামড়াটা ভিজে ভিজে, হালকা সবুজ শ্যাওলায় আস্তরণ তার উপর। আর জায়গায় জায়গায় নানা আকারের ছাতা। একটা টুক করে তুলে ফেলল বিভু। ভেবেছিল লাগবে, ফুসকুড়ি ফাটানোর মত, বা আরো জোরে। কিন্তু লাগল না একটুও। তবে ওইখান থেকে একটা ছোট্ট ছাতা মাথাচারা দিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিভু সামনে ঘুরে আঁতকে উঠল। বুকে ভরে গেছে ছাতায়। গাল থেকেও এক দুটো উঠি উঠি করছে। হাতে, পায়ের পাতায়। বিভু প্যান্ট খুলতে সাহস পেলো না। নিজেকে খুব করে বোঝালো, ও নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে, এ’সব স্বপ্ন।

পর্দা টেনে, জানালা এঁটে বিভু বেশ খানিক চিন্তা ভাবনা করার চেষ্টা করল। গতিক সুবিধের নয়। গায়ে হাত পায় ছাতা ধরা কাজের কথা নয়। চুলকাচ্ছে খুব। নখের ডগায় সবুজ শ্যাওলা জমছে। ঘন্টা আধেক পরে একটা বিচ্ছিরি গন্ধ পেলো বিভু। পচার গন্ধ। বিকার। একটু দুঃখ পেলো বিভু। ধূপ-আতরের সাধ্যি নেই এই গন্ধ তাড়ানোর। পচতে পচতে এবার প্রশ্ন মাথায় আসা শুরু হল। কী জ্বালাতন! কেন? এর উত্তর এখন বিভুকে কে দেবে? কেন পচন? কেন ছাতা? কেন শ্যাওলা? ওই যে একটা গান ছিল না? দুঃখ কেন হয়? পরের প্রশ্ন, বিশ হাজার টাকার জন্য, এই ছাতা ধরা যাবে কী? আর বনলক্ষ্মী বাম্পারের এক কোটি টাকার পুরস্কার জেতার জন্য উত্তর দিন! এই শ্যাওলা কিসে যায়?

বিভু টলতে টলতে বাইরে এসে দাঁড়ালো। বাঁ হাতের দু’টো আঙুল খসে পড়ে গেছে খানিক আগে। মধ্যমা আর অনামিকা। পিঁপড়েতে ভিড় করেছে তাদের উপর, কাড়াকাড়ি চলছে। হাসল বিভু। কারুর কাছে তো চাহিদা আছে তার! ডান হাতের তর্জনী দিয়ে নাকটা চুলকাতে গেল। ঝুরঝুর করে ঝরে গেল সেটাও। শুকনো বালির মত পা দুটো ছড়িয়ে গেল। উঠোনে শুয়ে পড়ল বিভু। চিৎ হয়ে। দুব্বো আর ঘেঁটুফুলের মাঝখানে মাথা জাগিয়ে রইল কয়েকটা ছাতা। “ভগবান, আমায় টগর গাছ করতে পারতে” বলল বিভু।