পঞ্চম দিনের সকাল। পিচে ধুলো। দু’শো সত্তরের লিড। ডিক্লেয়ার করবে কি করবে না? চায়ের কাপের তলায় শেষশয্যায় মেরী। কাঁকরোল এনেছে বাবা আবার। জোছনামাসি সরপুঁটির আঁশ ছাড়াচ্ছে। কানাই আর আর কানাই এর বোন লেজে মাছি তাড়াচ্ছে। কানাইএর বেঁচে থাকা চোখটায় খিদে। দ্বাদশ চ্যাপ্টারের অন্তে বুকমার্ক,  শীর্ষেন্দুর শারদীয়া অদ্ভুতুড়ের পাতা হাট করে খোলা। হাতে শুকানো আটা নিয়ে স্কোর দেখে যাচ্ছে মা, ওভার দুয়েক বাদে বাদে। ডিক্লেয়ার না করলে দশ উইকেট তোলা যাবে না আজ আর। বছরের নোবেলজয়ীদের উপর প্রতিবেদনটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে রাখল বাবা। ঝুপ করে কারেন্টটা গেল। একটা হৈচৈ, মোড় নাগাদ। বাবার চটিটা পায়ে ছোট হয় এক সাইজ। ছিঁড়লে রক্ষে থাকবে না। ছিঁড়েছে, তবে তার। ওভারহেড। সবুজ টাটা চারশোসাতের উপর দুগগা, দুগগার অক্সিলিয়ারি ডানহাত নম্বর এক এ খড়্গ, তাই ঠেকেছে তারে। ছিন্ন হল যবে তার… 
 
কেমন করে জানি জট ছাড়ল, দুগগে ক্লাবের ভিতর জিরোতে বসলেন। বাড়িতে হাতপাখা বেরোল। কালোজিরে ফোড়নের ছিকছিক। পঞ্চাশ আদা নিয়ে আয় তো দৌড়ে। আর দু’টাকার মেথি। চালকুমড়োতে দেবো। মানিক দোকানির নীল ছিটে জামা ফুঁড়ে বনসাই কাশফুলের মতন লোম বেরিয়ে এসেছে। দু’টাকা খুচরো দাও। গাবদা রেডিওতে কমেন্ট্রি। তিনশো তিন অল আউট। এইবার জমবে। আউট হয়ে ফেরা ব্যাটসম্যানরা যেরকম বগলে ব্যাট নিয়ে ফেরে, জোছনা মাসি ছাতাটা সেই কায়দায় নিয়ে প্লাস্টিকের চটি গলিয়ে হাঁটা দিল। মই পাকিয়ে তার জুড়েছে মিস্তিরি। কেয়াবাৎ, এত্ত জলদি? মা এসে ধুপ করে ডিভান আলো করে বসল।  এখন তো ওদের একটু সময় লাগবে নামতে, জ্যাম পাউরুটি খাবে, রিমোটটা দে দেখি। মায়ের আঙুলে হলুদ। বাবার নাকের ডগায় পক্ষপাতদুষ্ট রিডিংগ্লাস। আমি ব্যাঁকাইনি, মা কসম। ওটা মা ও পরে। হলুদ রঙের একটা সরু খাপের মধ্যে থাকত, খাপ খুললেই নিকটদৃষ্টি। স্নানে যাবি কি যাবি না? বাবা আগে যাবে। তাহলেই হয়েছে। যা যা যা। সব বুঝি। আর একটু সিরিয়াল দেখার ধান্ধা। 
 
আমি নারকেল তেল মাখি না। আমি বাথরুমে গান ও গাই না। শ্যাডো প্র্যাকটিস করি। করতাম। কলটা ভাঙার পর থেকে বন্ধ। ওরা নেমে গেল। গেছে, নির্ঘাৎ। বালতি খালি করে বেরোই। চুল আঁচড়ানো যাচ্ছে না। বাবা আয়না জুড়ে দাড়ি কাটছে। ড্রেসিং টেবিল ময় কুচো কুচো চুল, মা চিল্লাবে, আর বাবা নীরবে চিরুনিটা তুলে ধরবে। কেস ক্লোজড। ইদানীং বাবার আর মায়ের চিরুনির ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি মায়েরটার কাস্টডি পেয়েছি। কী যে আঁচড়াস, মাথার সামনেটা ফুলে থাকে। হয়েছে এবার যথেষ্ট, ঘোরাবে? হেডেন তিনখানা চার মেরে দিয়েছে এর মধ্যে। তোর বাবা বেরিয়েছে? উঁহু। ঢোকেইনি স্নানে, দাড়ি কাটছিল তো। এরপর গোটা সাত লক্ষ সত্তর একটা হুঙ্কার শুনতে পাবে। স্কুলে পড়িয়ে পড়িয়ে এই বদভ্যেসটা হয়েছে মায়ের। এটা, আর পেন হারানো। আমি অত লাল পেন কোথা থেকে পাই। আবার একটা চার। 
 
মা ভাতের দঙ্গলে নুন লুকিয়ে রাখবে এক চিমটে। কারণ তরকারিতে নুন কম। কারণ বাবার প্রেশার। আমি সজনে ডাঁটার ছিবড়ের দঙ্গলে মাছের মাথা লুকোবো। কারণ ঘোর অপছন্দ। শ্বশুরবাড়িতে মুড়ো দেবার ব্ল্যাকমেলে আমার কাজ হয় না। স্লিপে ক্যাচ। একটা গেল। কাঁটা দেখে খাবি। 
 
কি গো? যাবে না? পাপিয়া বৌদি। মা এবার হুটোপাটি করবে। বেরোবে। ঢাক। উলু। বাবা বুকের উপর হাত রেখে ঘুম। অমন পরিষ্কার এলবিডব্লুটা দিলো না! 
 
ওকে একটা এসএমএস করি।