খালি নাটক। খালি নাটক।
তেতলার ছাদের জলের ট্যাঙ্কির উপর দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে শিবালিকের মেজো সাইজের পাহাড় দেখতে পাওয়া নাটক নয়? ঘেঁটু মুখ বেঁকিয়ে বলবে “অল আই সি ইজ মানিক’স গোলা, ক্যাটকেটে কমলা রঙের ফ্ল্যাট, মিস্তিরিপাড়ার হলদে ছোপ ছোপ মসজিদ, অগ্রণীর অকম্মার ঢেঁকি ক্লাব আর পুকুর উইথ কচুরিপানা।” ব্যস। নাটকের পর্দাপতন। এতক্ষণ এলোমেলো হাওয়া দিচ্ছিল। নীলচে সবুজ বা সবজে নীল পাহাড়গুলোয় ঢেউ খেলানো কুয়াশা। সেখান থেকে ঝুপ করে পাপ্পুদের সুপুড়িগাছ আর জামাই এর রিকশার প্যাঁ। এরকম হরবখত হয়। ফটিক উৎকর্ণ হয়ে বলবে “ওই শোন। পিপুলের যত হলদে পাতা জমেছিল মাটিতে, হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যায়।” ঘেঁটু নাক সিঁটকিয়ে বলবে “ছোঃ! ট্রাক থেকে স্টোনচিপস নামাচ্ছে ওরা!” যত্ত নাটক ফটিকের। এরপরেও বলবে ওটা পাথরকুচির গান।
এক গঙ্গা ক্যালরব্যালরের মধ্যে সিলিংপানে চেয়ে থাকে ঘেঁটু। সে দেশে ছাদ নেই। দড়িতে ঝোলা ভিজে কাপড়গুলো থেকে টুপ টুপ করে জল ঝরে। শুকোতে চায় না ভারী হাওয়ায়। অড়হরের ডাল গলা দিয়ে নামে না। আতিপাতি করে চানাচুরের তলানিটুকু খোঁজে ঘেঁটু। গণেশ সদ্য বিসর্জিত হয়ে বাড়ি ফিরেছে, সে আবার আসতে পাবে কেন? আর ঘেঁটু কেন না? অন্যায়। অন্যায়। বেভাষী ক্যালরব্যালর ছাড়িয়ে “পাঁচ তারিখ ফিরব”গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রেডিওতে টিকিটের বিজ্ঞাপন দেয়। আকর্ষণীয় ছাড়। তার টুঁটি টিপে ধরলে “আমি তো বাবা সপ্তমীতেই কাটছি। কিন্নর কৈলাস। ভিড় হবে বটে একটু।” ভিড়। বড্ড ভিড়। চানাচুর খতম। সাদা প্যাকেটে একখানা সিগারেট পড়ে। দেশলাই?
সিলিংভেদী দৃষ্টিতে শারদীয়া মেঘ গোনে ফটিক। ও দেশেও ছাদ অমিল। স্নেয়ারে আর ফ্লোর টমে ঢ্যাঙ্কুরাকুর খোঁজে সে, সিম্ব্যালে কাঁসর। ঘি নেই। লো ফ্যাট মিল্কের মাখন। সেই মাখনের পোলাউ। “বাঁশ দিয়ে লাইন এগোবার খাঁচা করে দিয়েছে। ” ঘেঁটুকুমারীর কানে ফিসফিস করে ফটিক। ঘেঁটু বারান্দার রেলিঙে ঝোঁকে। “আমি কিন্তু হাঁটতে পারব না। ঘামে জবজবে। ঈশ!” ফটিক বলে “যদি একটা মিনিটের জন্য সবাই চুপ থাকত, নিউ আলিপুরে লক্ষ মানুষের নিঃশ্বাস শুনতে পেতি শুধু। অত নিঃশ্বাস শুনেছিস একসাথে আগে?” জানালার পাল্লাদুটো বন্ধ করার পরেও হাওয়া ঢোকে একটু। ফাঁক আছে। ফটিক আর ঘেঁটু ছাদের দেশে যায়। অসংখ্য চন্দননগরী টুনি প্রেক্ষাপটে ঝিঁঝিঁ করে। ইয়ারফোনে দীর্ঘশ্বাস শোনে ঘেঁটু। “তোর ষষ্ঠী আমার। সপ্তমী আমার। অষ্টমী আমার। নবমী নিয়ে যা পারিস কর। দশ-” ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করায় ঘেঁটু।
খালি নাটক।