“তুমি এখন কোথায়?”

এটাই শেষ বার্তা যেটা পেয়েছি। একটা সোজা প্রশ্ন। আমি এখন কোথায়। উত্তর দেওয়া হয় নি। তার একটা কারণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আরেকটা কারণ আমি কোথায়, সেটা জানিনা। কিন্তু আমার গতিবেগ সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত। ন’শো বারো কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলে এক্ষুণি। হাইজেনবার্গ এর ফরমান, নড়চড় হবার উপায় নেই। হামবাগ সূর্যটা সময়ের আগেই উঠে পড়েছে। হিয়ার কামস দ্য সান। পূব দিকে চলেছি। সময় হারাচ্ছি দ্রুত। ভূগোলমাল।

কিন্তু আমি কোথায়, জানিনা। কোথায় যাচ্ছি, জানি। কোথা থেকে আসছি, সেও জানা। কী ভাগ্যি সে দুটো আলাদা। নইলে অসীম বৃত্তে পড়ে পাক খেতে হত। উপগ্রহ হতে আমার ভীষণ ভয়। তার থেকে উল্কা হওয়া অনেক ভালো। “এই তো মা, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, ফিরছি।” নাক বরাবর বাড়ি। নইলে ধূমকেতু। “আসছি” বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও, টুথব্রাশ হাতে প্রতিবেশীর অতিথিকে বাসস্ট্যান্ড অবধি পৌঁছে দিতে পারো, রাস্তার কলে মুখ ধুয়ে হাওড়া অবধিও যাওয়া যায়, আর একটু ইতস্ততঃ ভাব দেখিয়ে “নাহ, চলুন” বলে তাদের সাথেই সোজা রাণাঘাট অবধি গেলেই বা আটকাচ্ছে কে?

অনিশ্চয়তার সূত্র থাকে? মানে, তাই বলে অনিশ্চয়তার? সূত্রই যদি থাকবে, আর যদি মানাই হবে সেটা, তবে অনিশ্চয়তা কীরকম? আহ। এঁড়ে তর্ক কোরো না। বেছে নিতে হবে, সেটাই ওনার বক্তব্য। হয় গতিবেগ, নয়ত অবস্থিতি। গাছের খেলে তলারটুকু না কুড়িয়ে বাড়ি যেতে হবে। দু’টো একসাথে নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

“তুমি এখন কোথায়?”

পায়ের তলায় মেঘ। সিঁদুরে নয়, বিশুদ্ধ সাদা, ডিটারজেন্টের বিজ্ঞাপন। থেকে থেকে কান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢোঁক গিললে খট করে খুলেও যাচ্ছে। হাওয়াই গিলে চলেছি তাই। হাওয়াইজাহাজ মেঘ গিলছে, উচ্চতা হারাচ্ছে ক্রমশ। পেট গুড়গুড়, ফাঁকফোকর দিয়ে চৌকো, আয়তকার ক্ষেত, চিকচিকে ফিতের মত নদী, বড় হতে থাকা শহর। কোমরে দড়ি বাঁধতে বলল কাপিতান। আসছি, নামছি। মাথা তোলো, দেখতে পাবে। ঠিক উপরটায়। অবতরণ জরুরী। শহরের আকাশ আর স্তম্ভ মিশে যাচ্ছে।

এসেছি। কত জোরে, জানিনা।