যাবি?
জঙ্গলটা ঝুপ করে শেষ হয়ে গেছে। রাস্তাটা আঁকার সময় অসাবধানতাবশে হাতটা ছবির পাতা ছাড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল তুলি সমেত বলে সেই শেষের আকস্মিকতা পেরিয়েও একটু এগিয়ে আছে। জঙ্গলটা এতক্ষণ গিলে রেখেছিল রাস্তাটাকে, এবার একটু আলোর মুখ পাওয়া গেল সুড়ঙ্গের শেষে। দুই পথিক “নাহ ঠিক রাস্তাতেই এসেছি” আর “এসে গেছি!”‘র হাসি ভাসালেন একে অপরের দিকে। পাঠক লক্ষ্য করলে দেখবেন যে এই পথিকেরা শ্রান্ত নন। এদের কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে না। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করবার ছাপ নেই তাদের চেহারায়, দেহভঙ্গিতে। আবার পথশেষের উত্তেজনাও নেই। না, ব্যাপারটা বুঝুন। শৃঙ্গজয়ের উত্তেজনায় ভোলা ক্লান্তি এদের নয়, যাত্রার অবসন্নতায় প্রান্তদর্শনের মজাই মাটি, সেরকমটাও দেখা যাচ্ছে না। দেখুন না, ওই যে। ওটা আনন্দ, পাঠক, ওটা শান্তি। এ জিনিস আপনারা দেখেন নি। দেখে নিন।
চল!
ঘাস কাদার উপর থেবড়ে বসে পড়ল থীবি। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়ল নিয়া। পৃথিবীটা এখানে শেষ হয়ে গেছে। এই যে সামনে খাদটা, এর ওপারে আর কিছু নেই। খোলা আকাশ। নিয়া উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে সে খাদের কিনার থেকে মুখ বাড়িয়ে দিল। নীচে তাকালে মাথা ঘোরে না। নীচে কিছু নেই। সামনে কিছু নেই। পিছনে একটা হঠাৎ শেষ হওয়া জঙ্গল, গোটা দুনিয়া। আকাশটা খুব স্পষ্ট নয়। মিহি কুয়াশা গায়ে ঠেকে। ছেঁড়া ঘাসগুলো নিয়ার পিঠের উপর ছড়িয়ে দিল থীবি। তারপর ঝুঁকে শুয়েই পড়ল তার পাশে।
“এখানেই, না?”
“হ্যাঁ। এটাই। এখানেই।”
“এরকমই হবে ভেবেছিলাম। ঠিক এইরকম। শুধু একটা লেবুচাওলা ছিল সেখানে।”
“চাঁদ ছিল না?”
চাঁদ ছিল, নিয়া জানে। চাঁদটা সবখান থেকে দেখা যায়। এখান থেকে যাচ্ছে না। এটা দুনিয়ার শেষ প্রান্ত, পৃথিবী এখানে ফুরিয়েছে।
“যাবি, থীবি?”
“চল!”
ঘাস ঝেড়ে দু’জনে উঠে দাঁড়াল। পা বাড়াল খাদে।