রাইফেল ক্লাবের মাঠে বৃষ্টি পড়ছিল। আদিগঙ্গার খালে বৃষ্টি পড়ছিল। শান্তিনগরের সাঁকোয় (সাঁকো বললে ওর রাগ হয়, ইদানিং চওড়া হয়েছে) বৃষ্টি পড়ছিল। দিনের প্রথম মেট্রোটা বৃষ্টির থেকে বাঁচতে টানেলের মধ্যে গিয়ে সেঁধোল। কামড়াকামড়ি থামিয়ে বাসস্ট্যাণ্ডে অগুনতি পায়ের মাঝে একটু জায়গা ভাগ করে নিল দুটো বাদামি কুকুর। ট্র্যাফিক পুলিশের গোল বাক্সে উঠে বসল পাগলটা। জুলাইস্য প্রথম দিবসে কলকাতায় বৃষ্টি পড়ছিল।
পাঁচিলে শ্যাওলা পড়েছে। ছাদের পাঁচিলে। মেঝেতেও। পা পিছলে যায়। দু’কোণায় দুটো বাঁশ অবিচল, ঋজু, বিস্মৃত। কেউ আর ছাদে কাপড় মেলে না। এই ছাদে না। ছাঁটে মিইয়ে যাওয়া দরজার পাল্লাটা ঠেলে খুললেই ব্যাপ্তির বিস্ফোরণ ঘটত এতদিন। তিনদিকের ফ্ল্যাটের গা-জোয়ারিতে সে প্রসার সঙ্কুচিত। পিঠ ভিজিয়ে চিৎ হয়ে শুলে তবু নেমে আসা আকাশ দেখা যায়। পৃথিবীটা ঘোরে। বৃষ্টিধারার সাথে মেঘগুলোও নেমে আসে বুঝি। চোখ অচিরে বন্ধ হয়ে আসে। ছাদের উপর বৃষ্টি পড়ছিল।
বৃষ্টিটা ঘামের দানার মত গায়ে আঁটে। অটোর সামনে বসা কলকাতার বাঁ কাঁধ ভিজতে থাকে, অন্তর্বাসের রেখা ফুটে ওঠে, হঠাৎ-গাড়ির খন্দ-ছলাতে কাদা-ছিটে নকশা ফোটায়। চেপেচুপে বোস, মা। শেয়ালদা মেইনের বাইরে একটা প্যাচপেচে স্বর্গ জন্মায়। অটো-বাস-ট্যাক্সি-দেখি দাদা সরে দাঁড়াবেন ঝাঁকা কাঁধে মুটে-মাইন বাঁচিয়ে অক্ষত কলকাতা নীলরতনের সামনে পৌঁছয়। উড়ালপুলের তলা দিয়েই ওড়ে। উনুনের আঁচে রুটি, ডিমভাতে, কয়লার ধোঁয়ায় অন্ধকার মহাকাব্য লেখে কলকাতা। প্রাচীর সামনে জানলা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্থবির ট্রাম। মৌলালিতে বৃষ্টি পড়ছিল।
নীলসাদা শহর সাদাকালো হয়ে ফোটে। বাসের হর্ন ব্যারিটোনে বাজে। ওয়াইপারের ছুটি বাতিল। কলকাতায় বৃষ্টি পড়ছে।