একদা ছিল দুইটি রাজ্য। তারা সহাবস্থান করিত বটে, কিন্তু কদাচ শান্তিপূর্ণ ভাবে নয়। তাহারা একে অপরকে আঁচড়াইয়া দিত, লাথির পিছনে আরও একটি থ যোগ করিয়া লাত্থি মারিত, রাগ কমিলে কবজিতে চুলকাইয়া বলিত “সরে শো না!” ইতিহাস পঠন করিলে পাঠক জানিতে পারবেন এই খট্টাঙ্গপট্টনমের দৈনিক (বা রাত্রিকালীন) যুদ্ধে ঘেঁটুসর্দারের কাছে বরাবরই আত্মসমর্পণ করিয়াছেন ফটিক শাহ। এই কথাগুলি কিন্তু দলিল দস্তাবেজে পাইবেন না, শাহ কখনও স্বীকার করেননি, কিন্তু সর্দার কেবল ছলে এবং কৌশলে (বলে নয়, বল তার নেই, সে নিজেই একটি বল) সমরজয়ী হয়েছেন। পাশবালিশ কবেই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ঘেটুসর্দারের রাজ্যের সীমানা বাড়তে বাড়তে দিগন্তের চৌহদ্দিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর একটু এগোলেই পৃথিবীর শেষ, সটান নীচের খাদে, পাতালের মেঝে অপেক্ষা করে রয়েছে, তারপরেও “সরে শো না!” শুনলে কীরকম মাথা গরমটা হয়! ফটিক শাহ বেশ স্থিতধী মানুষ। চট করে রাগেন না। দোষের মধ্যে কয়েকবার পাশবালিশ টপকানোর চেষ্টা করেছিলেন। মিত্রতার প্রস্তাব নিয়েই। খারিজ হয়ে গেছে। সর্দারের নাকি গরম লাগছে। বিছুটিপাতাকে যে পয়জন আইভি বলে সাহেবরা, শাহবাবু শুধু সেইটুকুই জানতেন, আজ তার ঘষা খেলেন।

তা গরম আজও লাগছিল সর্দারের। ফটিক শাহ দূরদ্রষ্টা ও বটে, একখানা চাদর তিনি পায়ের কাছে নিয়ে শুয়েছিলেন। তাই মাঝরাতে যখন প্রবল বৃষ্টি নামল, এবং দানা দানা আর্দ্রতা বয়ে নিয়ে হুহু করে ঢুকতে লাগল হাওয়া, সেই চাদরটা দিব্যি মুড়ে নিলেন শাহ। এবং যথারীতি মুহূর্তকাল পরেই তাতে টান পড়িল। দুই পক্ষই, বলা বাহুল্য, সিংহভাগ দখল করতে মরিয়া। বাক্যহীন ব্যাটেলে এবার সমঝোতা হল। আধাআধি বখরা। আবহাওয়া শীতল। ঘেঁটুসর্দারের আর গরম লাগছে না। কবজিতে নখের ছোঁয়া টের পেলেন ফটিক শাহ। আসন্ন মিত্রপ্রস্তাব? মুচকি হেসে ব্রহ্মাস্ত্র ক্ষেপণ করলেন ফটিক। নীরবে, গোপনে। পাঁচ সেকেণ্ডের মধ্যে চাদর থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলেন সর্দার, নাক চেপে। বিজয়ীর হাসি হেসে চাদর পুনর্দখল করলেন শাহ।

তারপর থেকে গরম কমেনি।